
ফ্রিল্যান্সিং – বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় পেশা। ক্ষেত্রটি বিশাল হবার সুবাদে যেকোন বয়সের মানুষই এই পেশায় আগ্রহী, সেইসাথে শিক্ষিত বেকারদের জন্য এই সেক্টরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাময় পেশাকে ঘিরে আমাদের অনেকের মনেই রয়েছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে এই সেক্টরটি জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বাংলাদেশ সরকারও এই সেক্টরটি ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। যেহেতু সেক্টরটি বিশাল তাই এটি নিয়ে আমাদের অনেকেরই বিশেষ করে নতুনদের বেশ মাথা ব্যথা রয়েছে সেকারনেই আজ আমি এই সেক্টর নিয়ে নতুনদের কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। আমি এখানে মূলত অনলাইনে আয় বিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় চলে যাইঃ
১। ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সার বলতে আসলে কি বোঝায়?
উত্তরঃ ফ্রিল্যান্সিং হল মুক্তভাবে কোন কাজ করা অর্থাৎ কারো অধিনস্ত না থেকে বিভিন্ন সময়ে আপনার জানা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা। এক কথায় বলতে গেলে – মুক্তপেশাজীবি।
শুধুমাত্র অনলাইনে কাজ করলেই তা ফ্রিল্যান্সিং হবে এই ধারণা সত্য নয়। বাঁধা ধরা নিয়মের বাইরে যেকোন কাজ-ই যার মাধ্যমে আমরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারি তা-ই ফ্রিল্যান্সিং।
যে/যারা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁরাই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিত।
২। আউটসোর্সিং বলতে আমরা কি বুঝি?
উত্তরঃ নিজের কাজগুলো অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াকে মূলত আউটসোর্সিং বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে কোন কোম্পানী স্বল্প খরচে অথবা সময় বাচানোর জন্য কোম্পানীর বাইরে থেকে কিছু লোক দ্বারা কোম্পানীর কাজসমূহ করিয়ে থাকেন। বর্তমানে এই মেথড খুবই জনপ্রিয় সেইসাথে সময় এবং অর্থের বিরাট সাশ্রয় হয়ে থাকে।
জানিয়ে রাখা ভালো – আউটসোর্সিং কেবল অনলাইনের কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। যেকোন কাজই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপঃ বর্তমানে অনেক সিকিউরিটি ফার্ম আছে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ড এবং অন্যান্য পদে সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে। মূলত সেই প্রতিষ্ঠান নিজেদের জনবল না থাকায় অন্যদের মাধ্যমে সেই কাজটি করিয়ে থাকেন। এটাই মূলত আউটসোর্সিং তবে একটু খেয়াল করবেন এখানে সিকিউরিটি গার্ডকে কিন্তু আমরা ফ্রিল্যান্সার বলতে পারছিনা কেননা তিনি একটি নির্দিষ্ট চাকুরী করছেন অর্থাৎ তাঁকে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম এবং সময় মেনেই চলতে হয়, তিনি মুক্তপেশাজীবি নন।
৩। আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ অনেকেরই ধারণা আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং দুটো একই। আসলে আউটসোর্সিং হল একটা প্রক্রিয়া বা মাধ্যম এবং ফ্রিল্যান্সিং হল এক ধরণের কাজ। একজন ফ্রিল্যান্সার মূলত আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করে থাকে।
৪। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্ব প্রস্তুতিগুলো কি কি?
উত্তরঃ অন্যান্য পেশার ন্যায় ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসার জন্যও আমাদের কিছু পূর্ব-প্রস্তুতি থাকা উচিত।
- মোটামুটি ইংরেজী জানতে হবে (অবশ্যই ভালোভাবে লিখতে জানতে হবে)
- ইন্টারনেট সহ একটি কম্পিউটার থাকতে হবে।
- কম্পিউটারের বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে।
- যে কাজ করতে চান সে কাজ সম্পর্কে মোটামুটি ভালোভাবে জানতে হবে।
৫। ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের ক্ষেত্রগুলো কি কি?
উত্তরঃ ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের ক্ষেত্র বিশাল। মোটামুটি সব ধরণের কাজ-ই এখানে পাওয়া যায় তবে নিন্মোক্ত কাজগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়ঃ
- ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট
- এস ই ও
- কনটেন্ট রিসার্চ এন্ড রাইটিং
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- ভার্চুয়াল সহকারী
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি …
৬। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তরঃ এ কাজগুলো অনলাইন মার্কেটপ্লেস, সরাসরি ক্লায়েন্ট বা কোম্পানী হতেও পাওয়া যায়।
৭। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো কি কি?
উত্তরঃ অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে নিন্মোক্ত মার্কেটপ্লেসগুলো বেশ জনপ্রিয় এবং সিকিউরঃ
- Upwork.com
- Freelancer.com
- fiverr.com
- Peopleperhour.com ইত্যাদি…
কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে বিল্যান্সার (Belancer.com) নামে একটি প্রতিষ্ঠান ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে।
৮। মার্কেটপ্লেসের বাইরে আর কোন উপায়ে অনলাইনে উপার্জন করতে পারি?
উত্তরঃ অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বাইরেও আপনি উপার্জন করতে পারবেন। যদি আপনি ব্লগিং করতে পছন্দ করেন তবে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং বা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমেও ভালো আয় করা সম্ভব। আপনি যদি ভালো ছবি তুলতে পারেন তবে ছবি বিক্রি করেও উপার্জন করতে পারেন। এছাড়াও আরো অনেক উপায় রয়েছে এবং চাহিদার ভিত্তিতে প্রায়শই নিত্যনতুন উপায় যোগ হচ্ছে।
৯। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা বাঞ্চনীয়?
উত্তরঃ না! এমন কোন নিয়ম নেই তবে নিজের ওয়েবসাইট থাকা ভালো যাতে আপনার কাজগুলো আপনি গুছিয়ে রাখতে পারবেন সেইসাথে ডেমো/পোর্টফোলিও আকারে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন তবে থাকতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
১০। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য তুলনামূলক সহজ কাজ কোনটি?
উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রির কাজগুলোই তুলনামূলকভাবে সহজ এবং কম্পিউটারের বেসিক দক্ষতা থাকলেই করতে পারবেন তবে বর্তমান সময়ে এস ই ও (SEO) কম সময়ে শেখা যায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় খুব সহজেই কাজ পাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে এই কম সময়ের মাঝেই আপনি এক্সপার্ট হবার আশা করতে পারেন না, কেননা সার্চ ইঞ্জিন এর নিয়মাবলী পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার এস ই ও এর ধরনও পরিবর্তন হতে পারে আর তাই নিয়মিত চর্চার কোন বিকল্প নেই। এছাড়া আপনার যদি রিসার্চ এবং লেখালেখির অভ্যাস থেকে থাকে (ইংরেজীতে) তবে এর মাধ্যমেও খুব দ্রুত কাজে নামতে পারবেন।
১১। সবার পক্ষে কি ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব?
উত্তরঃ যেহেতু এটি একটি মুক্তপেশা তাই দক্ষতা থাকলে যেকোন বয়সের মানুষই এই কাজে যুক্ত হতে পারেন।
১২। আমি কি মোবাইল থেকে কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারব?
উত্তরঃ দুঃখিত! মোবাইল থেকে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করা সম্ভব নয়।
১৩। মোবাইল দিয়ে আমি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারি, আমার ফেসবুকে একাউন্ট আছে, আমি ইমেইল চেক করতে পারি, আমি কি অনলাইনে আয় করতে পারব?
উত্তরঃ দুঃখিত! সম্ভব নয়, মোবাইলের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসলেই আপনি সেটা বুঝতে পারবেন।
১৪। অনলাইনে আয় করে টাকা দেশে কিভাবে আনব?
উত্তরঃ বিভিন্ন ভাবে আপনার উপার্জিত অর্থ বৈধভাবে দেশে আনতে পারেন। এর মধ্যে পেওনিয়ার অন্যতম। মার্কেটপ্লেস এর ভিত্তি করে আপনি সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমেও টাকা আনতে পারবেন।
১৫। উপার্জিত অর্থ দেশে আনার জন্য কি পেওনিয়ার কার্ড অবশ্যই লাগবে?
উত্তরঃ যদি কোন মার্কেটপ্লেসে ব্যাংক উইথড্র করার অপশন না থাকে এবং ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অর্থ উত্তোলনের উপায় না থাকে তবে পেওনিয়ার এর কার্ডের প্রয়োজন পড়বে।
খুব শীঘ্রই আরো অন্যান্য প্রশ্ন নিয়ে আপনার সাথে আবার আলোচনা করার প্রত্যয়ে আজকের মত বিদায়। ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য…
মোঃ আনিসুর রহমান ভূইয়া
তারিখঃ ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ইংরেজী