
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বে স্বাগতম, এই দ্বীপে থাকার জায়গার চেয়ে খাবারের দাম একটু বেশিই, প্রায় সব কটেজের পাশেই খাবার এর হোটেলের ব্যবস্থা থাকে তবে খাবার এর ব্যপারে নিচের পয়েন্টগুলো লক্ষ্য রাখবেনঃ
১। না দেখে খাবার অর্ডার করবেন না।
২। খাবারের দাম আগে থেকেই জেনে নিন, সম্ভব হলে দামাদামি করে খেতে বসুন।
৩। প্রায় সব খাবারের দোকানেই খাবার এর প্যাকেজ থাকে বিভিন্ন দামে, সেখানে আপনি নিজের পছন্দের অর্ডার করেও প্যাকেজ করতে পারেন।
৪। অবশ্যই দামাদামি না করে কোন প্রকার খাবার খাবেন না, কেননা সেখানকার ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই আপনার থেকে টাকা খসাতে ওস্তাদ।
৫। সম্ভব হলে কয়েকটা খাবারের দোকান ঘুরে তারপর খেতে বসুন।
৬। রূপচাঁদা মাছ খেতে চাইলে মাছটি রুপচাঁদা কিনা কনফার্ম হয়ে নিন, কারণ রূপচাঁদা আর টেকচাদ মাছ দেখতে এতোটাই কাছাকাছি মানের সহজে পার্থক্য করা যায়না।
এবারে আবার ভ্রমণে ফিরে আসা যাক। খাওয়া দাওয়া করে আমরা সমুদ্র দেখতে বীচে গেলাম এবং গিয়েই আমরা মুগ্ধ নয়নে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এর অসাধারণ সৃষ্টি দেখতে পেলাম। সমুদ্রের নীল জলরাশি প্রবালে ধাক্কা খেয়ে প্রচন্ড শব্দে তীরে আছড়ে পড়ছে। অসাধারণ সুন্দর, যা নিজের চোখে না দেখলে শুধুমাত্র ছবি দেখে বোঝা সম্ভব নয়। বীচের খুব কাছেই হুমায়ুন আহমেদ এর কটেজ “সমুদ্র বিলাস” এর সামনে কিছুক্ষণ ফটোশট চলল। এরপর বীচ থেকে সূর্যাস্ত দেখলাম, দূর নীলিমায় সূর্য যেন টুপ করে মিলিয়ে গেল।
এরপর আমরা সন্ধ্যার নাশতা শেষ করে কটেজে ফিরে এলাম। মনে রাখবেন সেন্ট মার্টিনে কোন কারেন্ট নেই। সন্ধ্যার পর জেনারেটর চালু করা হয় এবং এই সুবিধা রাত ১১ টা পর্যন্ত থাকে। এর মাঝেই আপনাকে মোবাইল ফোনের/ইলেক্টনিক সামগ্রী চার্জ দিয়ে নিতে হবে।
রাতের খাবার শেষে সবাই মিলে বীচে চলে গেলাম। পূর্ণিমা রাতে সমুদ্রের ঢেউ প্রচন্ড শব্দে তীরে আছড়ে পড়ছে এবং প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে তখন। এরই মাঝে আল্লাহ্ এর সৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা বীচ ধরে হাটতে থাকি। জেটির ধারে চা পর্ব শেষ করে প্রায় ১২-৩০ এর পর বীচ থেকে ফিরে আসি এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই।
এরপর শুরু হয় আমাদের অসাধারণ আড্ডা, আড্ডা দিতে দিতে অনেক সময় পার করে দিই এবং ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর ৫-৩০ এ ঘুম ভেঙ্গে কয়েকজন মিলে অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয় দেখতে জেটিতে চলে যাই। এরপর রুমে ফিরে এসে নাশতা করে আমরা ছেড়া-দ্বীপে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করি। সকাল ১০ টার দিকে আমরা একটি লঞ্চ ভাড়া করে ছেড়া-দ্বীপে রওনা দিই। কথা ছিল লঞ্চে করে আমরা পুরো দ্বীপ সমুদ্রে থেকে ঘুরে দেখব তাই ভাড়াও গুনতে হল ৪০০০ টাকার মতো। আপনি এর চেয়ে কম দামেও যেতে পারবেন ট্রলার এবং স্পিড বোটে করে। অতঃপর ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লাফাতে লাফাতে আমাদের লঞ্চ চলতে থাকল এবং আমরা সেন্ট মার্টিন এর রুপ দেখতে থাকলাম।
প্রায় ৪৫ মিনিট পর ছেড়া দ্বীপে পৌছাই তখন পূর্ণ জোয়ার শেষ হয়ে ভাটার টান পড়ছে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম, মজা করলাম, ফটোসেশন করলাম।
এরপর প্রায় ১২-৪৫ এর দিকে সেন্ট মার্টিন ফিরে এলাম। ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে দুপুরের খাবার সেরে সোজা জেটিতে গিয়ে আমাদের জাহাজে উঠলাম। ৩-১০ মিনিটে জাহাজ সেন্ট মার্টিন ছেড়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হল। পুণরায় নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে প্রায় ৬ টার দিকে আমরা টেকনাফে পৌছি। তবে যাওয়ার চেয়ে আসার সময় রোলিং বেশি হয় তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করুন। টেকনাফে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত বাস সরাসরি স্পেশাল সার্ভিসে চেপে পুণরায় কক্সবাজার ফিরে আসি এবং সেখানে রাত্রে অবস্থান করি। ভোর ৬-৪৫ মিনিটে আমরা কক্সবাজার ছেড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং প্রায় ১১-৩০ এ বাসায় এসে পৌছি।
অনেকদিন পর আনন্দদায়ক এবং শিক্ষনীয় একটি ভ্রমণ হয়েছিল এটি। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর স্থানটিকে খুব কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেইসাথে অনেক কিছু শেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বন্ধুদের সাথে এমন ভ্রমণ সচরাচর করা হয়না তাই হয়ত আরো বেশি আনন্দ পেয়েছি। বন্ধুদেরকে আরো কাছাকাছি পেয়েছি। এককথায় অসাধারণ কেটেছে ভ্রমণের প্রতিটি দিনই। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দারুচিনি দ্বীপ নামে খ্যাত বাংলাদেশের অপূর্ব সুন্দর এই সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি। আশা করি আপনারও ভালো লাগবে, ধন্যবাদ সময় নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ – প্রথম পর্ব
মোঃ আনিসুর রহমান ভূঁইয়া
তারিখঃ ৩০/০১/২০১৬