
গত ২১-০১-২০১৬ থেকে ২৪-০১-২০১৬ পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে ঘুরে এলাম বাংলাদেশের অন্যতম প্রবাল দ্বীপ সেন্ট-মার্টিন। ভ্রমণের নানা রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখছি আমার এই ভ্রমণ পর্বটি। সকাল ৭ টায় আমরা কক্সবাজার এর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করি। দুপুর প্রায় ১১-৩০ মিনিটে আমরা কক্সবাজার এর কলাতলী পয়েন্টে পৌছাই, সেখানে বেশ কিছুক্ষন সময় অবস্থান করি। এরপর দুপুর এর দিকে লাঞ্চ শেষ করে চলে যাই কক্সবাজার এর অদূরে ইনানী সমুদ্র সৈকতে। কক্সবাজার হতে ইনানী যেতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো সময় প্রয়োজন পড়ে। তবে যেতে যেতে আপনি বেশ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন। মাঝপথে হিমছড়ির ঝর্ণা ঘুরে দেখে নিতে পারেন, কক্সবাজার হতে ইনানী পর্যন্ত প্রায় পুরোটা পথের একধারে পাহাড় ও অপর দিকে সমুদ্র, যা দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।
ইনানীতে আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান শেষে সূর্যাস্ত দেখে কক্সবাজার ফিরে আসি এবং পূর্ব নির্ধারিত একটি কটেজে অবস্থান করি। এরই ফাঁকে আমাদের সেন্ট মার্টিন এ যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করি, কক্সবাজারের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি থেকেই আপনি প্যাকেজ ট্যুর অথবা শুধুমাত্র সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার জন্য শিপের টিকিট পাবেন। বাস ভাড়া(আসা-যাওয়া)+সকালের নাশতা+শিপ ভাড়া+দুপুরের খাবার+বিকেলের নাশতা সব মিলিয়ে আপনার সেন্ট মার্টিন গিয়ে ফিরে আসতে গুণতে হবে ৯০০-১৫০০ টাকা, তবে আপনি দামাদামি করে চেষ্টা করে দেখবেন কত কমে যেতে পারেন। পরদিন ভোর ৬-১৫ মিনিটে সরাসরি স্পেশাল সার্ভিস এর গাড়িতে করে আমাদের টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাসেই আমাদের সকালের নাশতা দেয়া হয়। টেকনাফ পৌঁছুতে প্রায় ২-৩০ থেকে ৩ ঘন্টার মত সময় লাগে। এসময়ে রাস্তার দু’ধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন তবে কক্সবাজার হতে টেকনাফের বাস জার্নি আপনার স্মরণীয় জার্নি হয়ে থাকবে আশা করি :p
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ৯-৩০ মিনিটে LCT KAJAL এ করে আমরা সেন্ট মার্টিন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। একই সময়ে সব জাহাজ-ই জেটি ছেড়ে চলে যায় তাই যথাসম্ভব সময়মত উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবেন। নাফ নদীর ঢেঊ ডিঙিয়ে আমরা সেন্ট মার্টিন এগুতে থাকলাম। চারিদিকের দৃশ্য অসাধারণ সুন্দর, একপাশে পাহাড় অন্যপাশে সমুদ্র। কিছুক্ষণ এগোনোর পর আমরা মায়ানমারের কাটাতারে ঘেরা বর্ডার দেখতে পেলাম, এছাড়াও ডলফিন এর লাফালাফি এবং বিশুদ্ধ বাতাস ও পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চলি। মাঝপথে হালকা করে আরেকটি দ্বীপ চোখে পড়ে যার নাম শাহ পরীর দ্বীপ। বাইনোকুলারটিকে তখন খুব মিস করছিলাম, প্রায় ১১-৪৫ মিনিটে আমরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌছাই। জেটিতে তখন জোয়ার হচ্ছে কেবল, নীল ঢেউগুলো তীড়ে আছড়ে পড়ছে, দেখতে বেশ ভালো লাগল। যেহেতু আমরা সেখানে একদিন অবস্থান করব তাই প্রথমেই নীল জলে গোসলের আশা ত্যাগ করে থাকার জায়গা খুজতে বেড়িয়ে পড়লাম। জেটি থেকে সামাণ্য দূরত্বে স্যারের সহায়তায় একটা কটেজে থাকার ব্যবস্থা হল। একটি কথা বলে রাখা ভালো সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য না দেখে ঘর ভাড়া করবেন না এবং দরদাম করে নেবেন আগে থেকেই (দালালের দৌরাত্ব হইতে সাবধান)। সেইসাথে খেয়াল রাখবেন সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ এবং পানির সুবিধা পাচ্ছেন কিনা। প্রায় ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যেই ভালো রুম পাবেন এখানে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্বটি পড়তে নিচের লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমন – দ্বিতীয় পর্ব
মোঃ আনিসুর রহমান ভূঁইয়া
তারিখঃ ৩০/০১/২০১৬