blogging tips

আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার ধারাবাহিক নিবন্ধ – মানবজীবনে সাফল্যের হাতছানি

এই নিবন্ধে আমি মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব। আজকের আলোচনায় আমি ” মানুষের জীবন ও সাফল্য “ নিয়ে কিছু লিখার চেষ্টা করব, আশা করি আপনাদেরকেও আমি পাশে পাব।

আলোচনার শুরুতেই চলুন মানুষের জীবন সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই। আমরা সবাই জানি, প্রতিটি মানুষের জীবনই হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রতিটি মানুষই চায় সফল হতে, সকলেই চায় সফলদের সমান উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতি ও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে সকলেই হয়ত সফল হয়ে উঠতে সক্ষম হয়না। কিন্তু এত কিছুর পরও কিছু মানুষ সত্যিই সফল হয় এবং আমাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

আপনি কি মনে করেন যে সকল সফল ব্যক্তিরাই সুখী জীবন পার করে এসেছেন? তারা কখনো আপনার মত দুঃখ পায়নি? সহজ সরল পথে বিভিন্ন সুযোগ পেয়ে তারা সফল হয়েছেন? জানি আপনারও উত্তর হবে “না, তারাও কষ্ট সহ্য করেছেন”। তবে আমার প্রশ্ন হল আপনিও তার মত সফল হতে পারলেন না কেন? এর উত্তরে আপনি যত যাই বলুন না কেন সেগুলোকে ব্যখ্যা করলে আপনিও বুঝতে পারবেন আসলে আপনার উত্তরটি অজুহাত ছাড়া আর কিছুই  নয়। প্রত্যেকটি মানুষের জীবন আসলে একই ছকে বন্দি, খেয়াল করুন –

১। আমরা কেউই নিজের ইচ্ছানুযায়ী পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিনি।

২। কোন মানুষ জানেনা কখন তাঁর মৃত্যু হবে।

৩। প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটা কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়।

৪। আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কোন না কোন সময়ে সুযোগ পাই।

৫। যার যার মত করে আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন বুনে কিন্তু আমাদের সবাই সেই স্বপ্নের রক্ষনাবেক্ষন করতে পারিনা।

৬। জীবনের নানা ক্ষেত্রে আমরা হতাশাগ্রস্থ হই এবং আশা করি কেউ একজন আমাদের পথ দেখাবে।

৭। একটা সময় এসে আমরা সবাই মনে করি যে আগেই ভালো ছিল কিন্তু তখন আর পেছনে ঘুরে যাওয়া সম্ভব হয়না।

৮। ছাত্রজীবনে কম বেশি আমরা সবাই-ই আমাদের অভিভাবকদের উপর দোষ চাপাই যে – এর বাবার গাড়ি আছে তোমার নেই কেন? এর বাবার এত টাকা আছে তোমার নেই কেন? সেতো এত্তগুলো প্রাইভেট পড়ে আমি পড়ার সুযোগ পাইনা কেন? সেতো এতক্ষন পড়েনা তবে আমাকে সারাক্ষণ পড়তে হবে কেন? এই প্রশ্নগুলো প্রায় সবারই মনে আসে কেউ কেউ আবার এগুলো তাঁদের অভিভাবককে বলেও বসে (কেউ মুখ ফুটে বলুক আর নাই বলুক এটাই প্রকৃত সত্য, যিনি আজ বাবা তিনিও ছাত্রাবস্থায় একই চিন্তা করতেন। তবে সব মানুষের মাঝেই অন্যরকম কিছু মানুষ থাকে যারা আসলেই বেশ আলাদা চিন্তার মানুষ, তাঁদের কথা এখানে বলছিনা।)

৯। আমরা মনে করি আমার থেকে অন্যরাই হয়ত ভালো আছে। কিন্তু সে অবস্থায় গিয়ে মনে হয় আগেই ভালো ছিলাম।

১০। আমরা প্রায় সবাই নিজ নিজ ধর্মের উপর গড়ে উঠি কিন্তু পরবর্তিতে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে সেই ধর্মের কথাই ভুলে যাই এবং বিপদে পড়লে সেই কথাও মনে পড়ে।

১১। আমরা সবাই অন্যকে দেখে ভাবি আল্লাহ্‌ তাকে মনে হয় বেশি পছন্দ করেন তাই তাকে সুখি করেছেন বা সাফল্য দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ মনে হয় আমাকে পছন্দ করেন না।

১২। আবার আমরা কোন কিছু করতে গিয়ে সফল না হলে এই বলে স্বান্তনা নিই যে – “আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্যই করেন”। অথবা ভেবে নেন – “আল্লাহ্‌ এটি আমার কপালে রাখেননি”

এছাড়াও আসলে আমাদের নিত্যদিনের অনেক অভ্যাসেও মিল পাওয়া যায়, অর্থাৎ আমরা ব্যক্তিভেদে যে ভিন্নতা দেখি তা সত্ত্বেও আমরা মানুষ হিসেবে একই রকম তাই নয় কি !!! এর মানে দাড়াল মানুষ হিসেবে বিল গেটস এবং আমাদের মাঝে কোন তফাৎ নেই, তাহলে একটি প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে – আসলেই তো ! তিনি আজ মাইক্রোসফট এর প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন আর আমরা আফসোস ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না কেন? হ্যা এখানেই আমাদের মাঝে পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই পার্থক্যের মূল কারণ হল চেষ্টা, সততা, পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ে। বিল গেটস যেভাবে চেষ্টা করেছেন কোন একটা কিছু নিয়ে পড়ে রয়েছিলেন সেসময় অন্যরা হয়ত সেভাবে কখনো চিন্তাও করে দেখেননি অথবা তাকে এসব নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়েছেন। এসবের জন্য তাকেও কম কটু কথা শুনতে হয়নি অনেকে তাকে নিয়ে মজা করতেও পিছপা হননি, এমনকি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে রিলিজ করেও দেয়া হয়েছিল। অথচ এখন সেই মানুষটিই সফল হয়ে গিয়েছেন আর যারা তাঁকে কটাক্ষ করেছেন তারা নিজ জায়গার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি।

মনে রাখবেন – ছকে বাঁধা জীবন নিয়ে সব মানুষ সফল হতে পারেনা, বরং এই বাঁধা ডিঙিয়ে যাওয়া মানুষগুলোই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছুতে পারে। আর তাই অন্য সবার মত নিজেকে একদিকে না চালিয়ে কিছু কিছু মানুষ স্রোতের বিপরীতে চলতে থাকে এবং নানা রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সাফল্যের চূড়ায় নিজের স্থান করে নেয়। এতটুকু থেকে আমরা স্পষ্ট একটা ধারণা লাভ করতেই পারি যে – প্রত্যেকটি সফল মানুষের মত আমরাও যদি একান্ত সদিচ্ছায় কোন কাজে আত্মনিয়োগ করি এবং সকল কটু কথা, বাঁধা ও প্রতিকুলতাকে পাশ কাটিয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর চেষ্টা করি তবে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনও আমাদের সহায় হবেন এবং আমাদের সফলতার পথ আরো সহজ করে দিবেন ইনশা-আল্লাহ্‌ এবং আমরাও সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারব। মনে রাখতে হবে – মানুষ হিসেবে আমরা কেউই চিরস্থায়ী নই তবে কাজের মাধ্যমে আমরাও চিরস্থায়ী হতে পারি মানুষের হৃদয়ে। আর এজন্য উদাহরণের কোন অভাব নেই, খোঁজ করার আগেই এমন অনেক উদাহরণ আপনিই পেয়ে যাবেন। আগামী পর্বের আশাবাদ ব্যক্ত করে আজকের মত বিদায়। ভালো থাকুন সবসময় এই কামনায় –

মোঃ আনিসুর রহমান ভূঁইয়া
তারিখঃ ২৩/০১/২০১৬ ইং

Archive